রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান (পিপিএম) এর স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।
নাসিম শেখ, পিতা: মরহুম হাবিব শেখ, সাং- কলেজ পাড়া, বিনোদপুর, রাজবাড়ী পৌরসভা, রাজবাড়ী গত ২৮ ডিসেম্বর/২০১৯ পুলিশ লাইন্স গেট সংলগ্ন পুলিশ ক্যান্টিনে আত্মহত্যা করার জন্য বিষ খায়।
ঘটনার পর পরই পুলিশ খবর পেয়ে নাসিমকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার সদ্য কেনা একটা অঢ়ড়পযব মোটর সাইকেল পুলিশ জব্দ করে। দ্রুত চিকিৎসার প্রেক্ষিতে নাসিম সুস্থ হয়ে উঠে। এখন আইনী জটিলতা শুরু হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্ঠার কারনে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় নাসিমের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। আইনে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা হলে তার শাস্তি ১ (এক) বৎসরের কারাদন্ড। এখন নাসিম তার বড় ভাই ওয়াহিদ শেখ কে নিয়ে রাজবাড়ী জেলার পুলিশ সুপারের কাছে এসেছে। যাতে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলাটি রুজু না করে।
আমি নাসিমকে জিজ্ঞেস করলাম, বিষ খাওয়ার পর বেঁচে আছো কি করে, নাসিম উত্তর দেয়, স্যার বিষের মধ্যে মনে হয় ভেজাল ছিল।
নাসিমের যখন ৩ বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যায়। তার বড় ভাই ওয়াহিদের বয়স তখন ৭ বছর। ঘরে তাদের মা আছেন। ওয়াহিদরা এতই হত দরিদ্র যে তাদের কোন জমি নেই। রাজবাড়ী শহরে রেলের জমিতে তারা দোচালা একটা টিনের ঘরে বসবাস করে। বাবা মারা যাওয়ার পর ওয়াহিদ শহরের একটা চায়ের দোকানে কাজ নেয়। সাথে লোকজন বাজার করতে আসলে তাদের বাজার ব্যাগ রিক্সা পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গিলে ২/৪ টা বকশিষ পেতো। সারা দিনের জমানো এই টাকা দিয়ে ওয়াহিদ চাল কিনে বাসায় নিয়ে যেতো। সেই চালে তার মা এবং ছোট ভাই নাসিমকে নিয়ে জীবন চালাতো।
এখন ওয়াহিদের বয়স ৩৫ বছর। ছোট ভাই নাসিমের বয়স ৩২ বছর। ওয়াহিদ ২৪ বছর ধরে রাজবাড়ী শহরে রিক্সা চালায়। ওয়াহিদ বিয়ে করেছে। তার একটি ছেলে হয়েছে। সে স্কুলে পড়ে। কয়েক বছর আগে তার স্ত্রীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। জমানো টাকা এবং ঋন করে বউয়ের চিকিৎসা করায়। তার মায়ের ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ দুটোই আছে। দেশের অর্থনীতি মধ্যেম আয়ে উন্নীত হলেও তার ভাগ্যে কোন দুস্থ ভাতা/বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা জোটেনি। তাই ওয়াহিদের সংসারে আজও দারিদ্র্য ঘুচেনি।
ছোট ভাই নাসিমের বয়স এখন ৩২ বছর। দারিদ্র্যের কারনে সে এখনও বিয়ে করেনি। সে বিনোদপুর এলাকায় একটা ওয়ার্কশপে কাজ করে। দৈনিক আয় ৪ শ’সাড়ে ৪ শ’টাকা। কিছুদিন আগে তার মোটর সাইকেল চালানোর শখ হয়েছে। এক পরিচিত মোটর সাইকেলওয়ালার কাছে বলেছে, তোর মোটর সাইকেলটা দিবি? আমি একটু চালাবো।’ সে নাসিমকে কাছে ডেকে নিয়ে কান মলা দিয়ে বলেছেম, আর কোনদিন যাতে তোর মোটরসাইকেল চালানোর শখ না হয় সেজন্য কান মলে দিলাম। যেন মনে থাকে। শালা ভাত পাওনা, মোটর সাইকেল চালানোর শখ, নাসিম বাড়ী গিয়ে জেদ ধরেছে। মোটরসাইকেল তাকে কিনতেই হবে। ৩ জন সুদের কারবারীর নিকট থেকে মাসে ৭ হাজার টাকা সুদে ১ লক্ষ টাকা ঋন নিয়েছে। নিজে ১৬ হাজার টাকা যোগাড় করে স্থানীয় আনিস মোটর্স এ গিয়ে কিস্তিতে একটি মোটর সাইকেল কিনে নিয়ে আসে। নাসিমের আশা সে মোটর সাইকেল চালাবে। এদিক সেদিক ঘুরবে। কিন্তু এত টাকা কিভাবে সে পরিশোধ করবে? বাড়ীতে তার মা বকাবকি করেছে।’তুই কি শেষ পর্যন্ত ঋণগ্রস্থ হয়ে আমাদেরকে ভিটেছাড়া করবি? নাসিম দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবনে রাগে দূ:খে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ লাইন্স গেইটে পুলিশ ক্যান্টিনে এসে বিষ পান করে।
বড় ভাই ওয়াহিদ নাসিমকে ছেলের মতো বড়ো করেছে। সে কেঁদে কেঁদে বলছিল, স্যার আমরা খুব গরীব, আমার ছোট ভাই টাকে মাফ করে দেন। আমি নাসিমকে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু টাকা দিলাম। বললাম, যাও, মামলা হবে না’।