দেশের বৃহত্তম গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ওষুধের দোকান। এ সকল ওষুধ বিক্রেতা বিভিন্ন ধরনের যৌনউত্তেজক ওষুধ, শরীর মোটাকরণ ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের নানা অসুস্থ্যতায় ইচ্ছামত চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এতেকরে প্রাণহানিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।
সম্প্রতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে সুমী বেগম (২৫) নামের এক যৌনকর্মী গর্ভের ভ্রুন নষ্ট করতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তরণ জনিত কারণে মৃত্যু হয়। ভ্রুন নষ্ট করার জন্য সে স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্টারের পরামর্শে ঔষুধ খায়। পরে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানায়, সুমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় এ্যাবোশন করার জন্য নিজে নিজেই দোকান থেকে কিনে ওষুধ খেয়েছিল। যার ফলে প্রচুর পরিমানে রক্তরণ হতে থাকে। এতে তার শরীর ক্রমেই নিন্তেজ হয়ে যায়। তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে।
অপর এক যৌনকর্মী তার গর্ভের ভ্রুন নষ্ট করতে দৌলতদিয়া রেলস্টেশন এলাকার মোল্লা ফার্মেসী থেকে গর্ভপাতের ওষুধ কিনে খান। কিন্তু ওই ওষুধ সেবনের পর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হতে থাকলে তাকে গুরুতর অবস্থায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ওষুধ বিক্রেতাকে থানায় ডেকে নিয়ে আসেন রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার শরীফ উজ জামান। ভুক্তোভোগী অভিযোগ না করায় এসময় তিনি ওই অবৈধ ওষুধ বিক্রেতাকে ভুক্তোভোগীকে চিকিৎসা বাবদ নগদ ২০ হাজার টাকা আদায় করে দেন। সেই সাথে পরবর্তীতে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি না করার নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ভাবে ফুসলিয়ে এবং অপহরন করে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের এ পল্লীতে নিয়ে আসে। কিন্তু বেশীর ভাগ েেত্র ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের বেলায় সমস্যা হয়ে দাড়ায় তাদের রুগ্ন স্বাস্থ্য। এ সকল মেয়েদের দ্রুত স্বাস্থ্যবান ও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে তাদেরকে বিভিন্ন ট্যাবলেট ও শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এ জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন নিয়মিত গ্রহনের ফলে মেয়েদের বাহিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রিকে কেন্দ্র করে যৌনপল্লী ও এর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অর্ধশত ওষুধের দোকান। ওষুধ বিক্রেতাদের বেশির ভাগেরই নেই বিক্রির লাইসেন্স।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, দৌলতদিয়ায় ওষুধ বিক্রেতাদের অপচিকিৎসায় সম্প্রতি প্রাণহানিসহ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে ওষুধ বিক্রেতা সমিতির সাথে মতবিনিময় করে এ সকল বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধ ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অভিযান পরিচালনা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান শুরু করা হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহন করা কোন ভাবেই উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Home রাজবাড়ী প্রতিদিন গোয়ালন্দ অপচিকিৎসায় প্রাণহানিসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দারা