“ঢাকার ৬০ হাজার মাস্তান এখন আমার শত্রু” – মেয়র আনিসুল হকের এই কথাটিই আমার এখন ভীষণভাবে মনে পড়ছে। রাজনৈতিক দৌরাত্ন্যের কারনে ঢাকার আকাশ ভরে থাকতো অযাচিত বিলবোর্ডে। সেসময় সেগুলো সরানোই যাচ্ছিলো না কোনভাবেই। অবশেষে নগরপিতা সরাসরি হাত দিলেন ‘গ্রীণ ঢাকা’ গড়াও স্বপ্নে। মুক্ত হলো ঢাকার আকাশ আর রাজপথ।
কাজের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা দেখানো সেই মানুষটি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে গ্রীণ ঢাকা স্বপ্নের কারিগর আমাদের প্রিয় নগরপিতা আনিসুল হক এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহে…… রাজেউন)
জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সফল উদ্যোক্তা, শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, নতুন ভাবনার উদ্ভাবক ও বাস্তবায়নকারী সহ নানা পরিচয়ে বর্ণাঢ্য ছিলো তাঁর কর্মজীবন।
গণ মাধ্যম, তৈরী পোশাক শিল্প, জ্বালানি শিল্প, তথ্য প্রযুক্তিখাত সহ নানা অঙ্গনে তাঁর ছিলো বলিষ্ঠ পদচারণা। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল অবদি।
আশির দশকে টিভি উপস্থাপনায় ব্যতিক্রমী সত্তার কারনে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ সময় তাঁর নেওয়া শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার আজো মানুষের মনে আছে।
ঢাকা শহরকে বদলে দেবার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন আনিসুল হক। তাই মঞ্চে নয়, কাজেই বেশী পাওয়া যেতো তাকে। ঢাকার জ্যামজট সমস্যা নিরসনে তাঁর নানা কাজের সুফল ঢাকাবাসী এখনো পাচ্ছে। ঢাকার বহুসড়ক দখলমুক্ত করে তিনি সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, সাথে সাথে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের রোষেও পড়েছিলেন। গুলশান, বারিধারা, নিকেতন ও বনানীতা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ বাস সার্ভিস ‘ঢাকার চাকা’ চালু করেছেন তিনি। দখলমুক্ত করেছেন রাজধানীর বহু ফুটপাথ, ফুট ওভারব্রীজ ও ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকার সড়ক। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে ইতিমধ্যেই ওয়াসা খালকে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
মাত্র ২ বছরের নগত পিতৃত্ব, কিন্তু স্বপ্নের পরিধি তার চাইতে অনেক অনেক বড়। ৬৫ বছর বয়সের এই নগরপিতার অসামান্য অবদান রাজধানীবাসী স্মরণ রাখবে বহুকাল।
যোগ্য একজন মানুষ উপযুক্ত একটি স্থানে বসেছিলো। তাই মেধাবী, নির্লোভ ও পরিশ্রমী একজন মানুষ আনিসুল হক মেয়রের দায়িত্ব পালন করে গেছেন সফলতার সাথে।
তাঁর বিদেহী আত্নার প্রতি আমাদের নতশির শ্রদ্ধাঞ্জলী।