মেহেদী হাসান ॥
১৭ বছর যাবৎ গান বাঁজে না। নৃত্য হয় না। নাটক হয় না। হয় না কোন সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নেই কোন ছাত্র-ছাত্রী, নেই শিক্ষক। আছে ভবন। চেয়ার, টেবিল, মঞ্চ ও অফিস।
নামে শিল্পকলা একাডেমী। এমন আজব এক শিল্পকলা একাডেমী অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায়। চেয়ার, টেবিলসহ সকল প্রকার বাদ্য যন্ত্র অকেজো হয়ে পরে আছে।
এলাকাবাসী বলছে শিল্পকলা একাডেমীর কোন কর্মকান্ড না থাকায় যুব সমাজ ঝুকছে মাদক সেবনে। আর গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন বলছে সাংস্কৃতির বিকাশ এবং এর চর্চা করতে শীঘ্রই চালু করা হবে বন্ধ থাকা শিল্পকলা একাডেমী।
১৯৯৫ সালের ১৮ নভেম্বর তৎকালীন সংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহারানা বেগম ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা শিল্পকলার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে চেয়ার, টেবিল, হারমনিয়াম সহ সকল প্রকার বাদ্য যন্ত্র ক্রয় করা হয়। ছিল ছাত্রী-ছাত্রী। গানের শিক্ষক নজরুল ইসলাম কুটি। নাচের শিক্ষক লালন ও তবলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আসাদুজ্জামান সেলিম।
নিয়তমিত গান, নৃত্য প্রশিক্ষন দেওয়া হতো। হল রুমের ভাড়া ও ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের টাকা দিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হতো। তবে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক বছর পর সকল শিক্ষক শিল্পকলা একাডেমীতে আসা বন্ধ করে দেয়। শিল্পকলা একাডেমীর সকল ছাত্র-ছাত্রী বাধ্য হয়ে ইচ্ছা থাকার পরও সাংস্কৃতিক জগত থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে।
এর পর থেকে শিল্পকলা একাডেমীতে কোন ছাত্রী-ছাত্রী ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। নেই কোন শিক্ষক। ২০০১ সালের পর এই শিল্পকলা একাডেমীতে কোন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। যে কারণে উপজেলার সাংস্কৃতিক প্রেমি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ইচ্ছা থাকা শর্তেও শিল্পকলা একাডেমীতে ভর্তি হতে পারছেন না। বাদ্য যন্ত্র বাঁজে না। কোন শিল্পীর কণ্ঠে বাঁজে না গান। নাটকের শব্দও পাওয়া যায় না। হয় না কোন সভা সেমিনার।
গোয়ালন্দ উপজেলা চত্তরে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের সাথে তিনি জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর সাংস্কৃতিক চর্চা বন্ধ থাকায় যুব সমাজ আজকে মাদক সেবনে ঝুকছে। যুব সমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে শিল্পকলা একাডেমী সচল রাখা এবং সাংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী সফিকুল ইসলাম শামীম জানান, এক সময় রাজবাড়ীর প্রতিটি এলাকায় জারি, সাড়ি, ভাটিয়ালি গান হতো। তখন ব্যস্ততা ছিলো ঠোল তবলা কারিগরদের। আর এখন দেশীয় সাংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে টেলিভিশন খুললেই দেখা যায় স্টার জলসা আর জি বাংলা, যে কারনে প্রতিটি পরিবারে অশান্তি লেগেই আছে। তাছারা রাজবাড়ীতে সাংস্কৃতি চর্চার কোন স্থানও নেই যে কারনে অনেক শিল্পী বেকার হয়ে পড়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন রাজবাড়ীবিডিকে জানান, গোয়ালন্দ শিল্পকলা একাডেমী দীর্ঘদিন যাবৎ পরিতেক্ত অবস্থায় পরে আছে। গোয়ান্দের মানুষ শিল্প সাংস্কৃতিক মনা এবং রাজনৈতিক বৃন্দদের সাথে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীকে আবারো ঢেলে সাজানো যায় সে ব্যবস্থা আমরা করবো।