নাম তাঁর ফারুক প্রামাণিক। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু গত ১২ আগস্ট এলাকার তপন কুমার সরকার নামের এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে ছিলেন তিনি। এ অপরাধে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় ফারুককে। ওই শিক্ষকের বাবা মামলা করলে গ্রেপ্তারও হন তিনি। জামিনে ছাড়া পেয়ে এবার মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে পিটিয়ে তা ভিডিও করেন ফারুক।
২৪ ডিসেম্বর পাংশা সরকারি কলেজের পাশে সৈকত ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ফারুকের সঙ্গে ছিলেন পাংশা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সাহেদ আলী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম উদ্দিন।
এ বিষয়ে পাংশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ঘটনার শিকার ওই শিক্ষার্থী পাংশা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি কালুখালী উপজেলা সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামে। তাঁর বাবা গোলাম সারওয়ার ঠান্টু জেলা কৃষক লীগের (একাংশের) যুগ্ম আহ্বায়ক। এরপর থেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি পাংশা সরকারি কলেজের পাশে সৈকত ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। তাঁর বাবার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরোধের কারণে নিরাপত্তার অভাবে ছাত্রাবাস ছেড়ে দেন মোস্তাফিজ। দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে অংশ নিতে পারেননি। ২৪ ডিসেম্বর তিনি এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে কলেজে যান। কলেজে অধ্যক্ষ না থাকায় ছাত্রাবাসের দিকে যান ওই শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাসের সামনে যাওয়ার পর স্থানীয় ছাত্রলীগের তিনজন নেতা—ফারুক, সাহেদ ও আজিম তাঁকে ছাত্রাবাসের ভেতরে যেতে বলেন। তাঁদের সঙ্গে যেতে না চাইলে মোস্তাফিজকে জোর করে ভেতরে নিয়ে যান ওই তিন নেতা। এ সময় তাঁরা ওই ছাত্রের কাছে ‘কালুখালী উপজেলাবাসী’ নামে ফেসবুক আইডি সে চালায় কি না জানতে চান। অস্বীকার করলে মোস্তাফিজকে মারধর করেন তাঁরা।
এক পর্যায়ে মোস্তাফিজের প্যান্ট ও শার্ট খুলে মুঠোফোনে ভিডিও করেন ফারুক। কথামতো না চললে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। একপর্যায়ে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে পাশের একটি পুকুরে লুকিয়ে থাকেন মোস্তাফিজ। সেখান থেকে হাতে থাকা মোবাইল ঘড়ি দিয়ে বড় ভাইকে ফোন করেন ওই শিক্ষার্থী। পরে বড় ভাই তাঁর এক বন্ধুকে পাঠিয়ে উদ্ধার করে মোস্তাফিজকে। পরের দিন সকালে পাংশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মোস্তাফিজ। এরপর ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাফিজের মানিব্যাগ, মোটরসাইকেল, শার্ট-প্যান্ট উদ্ধার করেন পাংশা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আরিফুজ্জামান।
মোস্তাফিজকে ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে জানিয়ে এএসআই আরিফুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মোস্তাফিজের সঙ্গে ওই নেতাদের ঝামেলা ছিল। তবে নগ্ন করে ভিডিও করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। মোটরসাইকেলটি থানায় রয়েছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফারুক প্রামাণিক বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তাঁকে ষড়যন্ত্র করে জড়ানো হচ্ছে। আগে শিক্ষক পিটানোর ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন না। সাংবাদিকেরা তাঁর নাম জড়িয়ে রিপোর্ট করায় তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। (সূত্র : প্রথম আলো)