রাজবাড়ী জেলা সদরের মজলিশপুর এলাকায় ২০০৪ সালে নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার খলিলপুর এলাকার মোঃ নিহাজ উদ্দিন সরদারের ছেলে শহিদুজ্জামান চয়ন।
এরপর মিলের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখা হতে গত ২০০৫ সালের ১৬ মার্চ ১৪ কোটি ৭৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৬১ টাকা লোন নেন। পরবর্তীতে শর্ত মোতাবেক তা পরিশোধ করতে না পারায় গত ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ ব্যাংকটি সুদ আসলে ২২ কোটি ৩০ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকার দাবীতে ফরিদপুর বিজ্ঞ যুগ্ন জেলা জজ ১ম ও অর্থ রিন আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করেন। মামলার বিচার কার্য শেষ হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত বিবাদীপক্ষের ডিগ্রিকৃত ২২ কোটি ৩০ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ অন্যথায় আদালতের যোগে আইন সংগত উপায়ে পাওনা আদায় করতে পারবে বলে জানান।
এদিকে মিলটির পরিচালনাকালীন শহিদুজ্জামান চয়ন ব্যাংক লোনের তথ্য গোপন করে জয়েন্ট স্টোক কোম্পানির মাধ্যমে মিলের ৭৫ শতাংশ শেয়ার ডেসটিনি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন। তখন থেকে মিলটির নামকরন করা হয় “ডেসটিনি নিহাজ জুট মিলস লিমিটেড”। অপর দিকে ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর ৮.৫ লক্ষাধিক সাধারন সদস্যর নিকট থেকে প্রতারনার মাধ্যমে ১১ শত ৭৮ কোটি ৬১ লক্ষ ২৩ হাজার ২৪ টাকা স্থানান্তর ও রুপান্তরের প্রমান পাওয়ায় দুদক ঢাকার কলাবাগান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯ এর ৪ ( ২ ) ধারায় তৎসহ মানিলন্ডারিং আইন ২০১২ এর ৪( ২ ) (৩ ) দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ মিলটির মালামালসহ সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্রোকের নির্দেশ প্রদান করেন।
এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা হতে প্রেরিত পত্রের আলোকে তৎকালীন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মিলটির কর্মকর্তাদের নিয়ে মালামাল ক্রোক করার ও মিলের সামনে এই মিলের কোন সম্পত্তি, ক্রয়, বিক্রয়, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করা যাবে না মর্মে সাইবোর্ড টানানোর নির্দেশ প্রদান করলে। কর্তৃপক্ষ মিলের সকল সম্পত্তি ক্রোক ও তালিকা প্রনয়ন করে মিলটির তৎকালীন সহকারী ম্যানেজার আব্দুল হান্নান,ও চীফ সুপার ভাইজার মোঃ আরিফ সরদারের জিম্মায় প্রদান করেন।
এদিকে তিন চারটি মামলা ও আদালতের নির্দেশনায় মালামাল ক্রোক করার পরও মিলটি রয়েছে সচল। মিলের লভ্যাংশ কোথায় যাচ্ছে কতজন শ্রমিক কাজ করছে সরেজমিনে মিলটিতে গিয়ে দেখা যায় মিলের চাকা ঘুরছে স্বাভাবিক নিয়মেই। অন্তত একশত শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছে তাদের নীজ নীজ কাজে।
এ সময় কথা হয় মিলটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মোঃ আব্দুল হান্নান মিয়ার সাথে, তিনি বলেন, মিলটি দেনার দায়ে জর্জরিত। আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে আমাদের দুজনকে মালামাল রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে আমি প্রতি মাসে বেতন নেই। আর ১ শত শ্রমিক আছে তাদের বেতন প্রদান করি। ডেসটিনির মালিকানাধীন ক্রোককৃত সম্পত্তি চালু কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন মিলের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে তাই আমরা চালু রেখেছি কিন্তুু চালু রাখার ব্যপারে কোন কাগজ নেই আমাদের কাছে। তবে শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে মিলটি চালু রেখেছি মাত্র। তাছাড়া এখনও মিলটি লোকসানেরই চলে। কে এত বড় জন দরদি লোকসানে মিল চালাচ্ছে জানতে চাললে তিনি বলেন, কানাইপুরের কিছু ব্যাবসায়ী আছে যারা এর ভাগিদার।
এ ব্যপারে রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মাইনউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানার পর ক্ষতিয়ে দেখতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছি। আইনগতভাবে তারা দোশী হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।