রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বানিবহ পশ্চিম পাড়া গ্রামে মাছ চাষ করার জন্য কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন এক প্রভাবশালী। পানি বের হবার সকল রাস্তায় বন্ধ। ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে পানি বন্ধি ২৫টি পরিবার। একই সাথে অর্ধশত একর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে আরেক জনের পুকুর সেচের পানি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানালেন দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুর থেকে দেখে মনে হতে পারে বর্ষাকাল। চারি দিকে পানি। নালা ডোবা সবই পানিতে ভরা। চলাচলের পথ তলিয়ে গিয়েছে। কৃষি জমি পানির নিচে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন দুর্ভোগ বানিবহ পশ্চিম পাড়া গ্রামের ২৫ পরিবারের। পরিবারগুলোর দাবি এভাবে পানি থাকার কারনে বেড়েছে মশামাছি। পরিবারের কেউ অসুস্থ্য হলে তাদের চিকিৎসকের কাছে নিতে পারে না। আবার কৃষিপন্যও বিক্রি করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। একই সাথে অর্ধশত একর কৃষি জমি অনবাদি পরে আছে বছর জুরে। জমিগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, এসকল জমিতে তিনটি ফসল হতো। পাট, ধান, পেঁয়াজ ছাড়াও বিভিন্ন শীতকালিত সবজির আবাদ করতো তারা। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় জমিতে কোন কিছুই আবাদ করতে পারছে না তারা।
দুর্ভোগ আরো বেড়েছে রাজবাড়ীর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামছুল সালেহীন অপুর দিঘীর পানি। এই গ্রামটিতেই একটি দিঘীতে মাছ চাষ করে অপু। সেই দীঘির পানি দুটি শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচে পাশের ডুবাতে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে পানি গরিয়ে মাঠে যাচ্ছে। ফলে শুকনো মৌসুমেও পানি কমছে না।
এবিষয়ে সামছুল সালেহীন অপু জানান, আমি ড্রেন কেটে পানি বের করার পথ তৈরি করেই পুকুর থেকে পানি সেচা শুরু করেছি। স্থানীয়দের কোন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে আমি কোন কাজ করবো না। তবে মুল সমস্যা হলো পুকুর কেটে কালভার্টের মুখ বন্ধ করা হয়েছে। সেটি খুলতে পারলে গ্রামের জলাবদ্ধতা থাকবে না।
পানি বন্দি থাকার কারণ হিসেবে দেখা যায় পানি বের হবার যে, কালভার্ট ছিল সেটি স্থানীয় মাছ চাষী অমর পাল বন্ধ করে রেখেছে। রাস্তার বিপরীত পাছে অমর পালের নিজের জমি। সেই জমিতে পুকুর কেটেছে দের বছর আগে। পুকুরের চালা বেধে কালভার্টের মুখ বন্ধ করেছে অমর পাল। জমে থাকা পানি বের হবার কোন পথ নেই।
অমর পাল বলেন, আমার জমির দিকে পানি যেত না। এজন্য আমি পুকুর কেটেছি। আর পুকুরের চালা বাধার কারনে কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ছে। তবে পানি বের করতে গেলে আমার পুকুরে দুটি চালা কাটতে হবে। তারপরও পানি যাবে বলে মনে হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা গৌড়পদ শীল বলেন, আমার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। তাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিতে হয়। কিন্তু আমার বাড়ি পর্যন্ত কোন গাড়ী বা ভ্যানও আসে না। আমরা গত এক বছর ধরে কি যে সমস্যার মধ্যে আছি বলে বোঝাতে পারবো না।
বাবলু শীল বলেন, দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে দীঘি সেচের পানি। বললে কেউই শোনে না। আমার দেড় দিঘা জমি অনাবাদি পরে আছে এক বছর ধরে। কোন ফসল ফোলাতে পারি না পানির কারনে।
স্থানীয় মেম্বর আলী আকবর জানান, এই ২৫ টি পরিবার খুবই কষ্টে আছে। তাদের বাড়ি থেকে বের হলেই পানি। একই সাথে এলাকার ৫০ একরের বেশি জমিতে কোন ফসল আজ এক বছর ধরে হয় না। এলাকা বাসির সাথে নিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু এসব পুকুরের চালার কারনে পারিনি। এজন্য আমি উপর মহলের সহযোগীতা কামনা করি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মার্জিয়া সুলতানা বলেন, আমি মৌখিক ভাবে এবিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। দার্ঘ সময় ধরে একটা গ্রামের মানুষ পানি বন্দি এবং জমিতে ফসল ফোলাতে পারছে না। দ্রতুই আমি সহকারি কমিশনার ভুমিকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিব। যাতে খুবই দ্রুততার সাথে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।