সারা দেশের মধ্যে মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে বিখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলা। এ জেলার ৫টি উপজেলার প্রতিটি এলাকাতেই প্রচুর পরিমাণ পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে এ বছর পিঁয়াজের দাম না থাকার কারণে কৃষকের মনপ্রতি ৩শত টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন পিঁয়াজ ক্ষেত থেকে উঠানোর মৌসুম চলছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের বিলধামু গ্রামের পিঁয়াজ চাষী আব্দুস সালাম মন্ডল, খাটিয়াগাড়া গ্রামের আইয়ুব আলী, বশির আহম্মেদ, চরঘিকমলার আলমগীর হোসেন, পাটকিয়াবাড়ীর লোকমান হোসেনসহ এলাকার অনেক কৃষককের সাথে কথা হয়।
পিঁয়াজ চাষীরা বলেন, এ অঞ্চলে ২২ শতাংশ জমিতে একপাখি। এক পাখি জমিতে পিঁয়াজ চাষ করতে ২৪ হাজার ৪শত টাকা খরচ হয়েছে। জমি চাষ ১ হাজার ৪শত টাকা, পিঁয়াজ বীজ ১০ হাজার টাকা, সার ২ হাজার টাকা, ঔষধ ১ হাজার টাকা, সেচ ১ হাজার ৮শত টাকা, রোপন, পরিচর্যা ও ক্ষেত থেকে উঠানোসহ ৭ হাজার টাকা, বাড়ীতে গাড়ীতে আনা ৬শত টাকা ও পিঁয়াজ কাটা ১২শত টাকা খরচ হয়েছে। ২২শতাংশ জমিতে এ চলতি মৌসুমে ৩০ মন করে পিঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্যে ৭ থেকে ৮ শত টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। এতে ২১-২২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেক চাষী তাদের নিজস্ব কোন জমি না থাকায় বাৎসরিক একপাখি (২২শতাংশ) জমি ২০ হাজার টাকায় লীজ নিয়ে চাষ করছে। ওই জমিতে পিঁয়াজ ও পাট চাষ করে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে খরচের হিসাবে আরও ১০ হাজার টাকা যোগ হচ্ছে। ফলে বর্তমান বাজার মূল্যে কৃষকের মনপ্রতি পিঁয়াজ চাষীদের ৩শত টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, পিঁয়াজ চাষে উপযোগী হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমান পিঁয়াজের আবাদ হয়। যদি ১৫-১৬শত টাকা মনও হতো তাহলে চাষীরা লাভবান হতো। এ ভাবে লোকসান হলে আগামী পিঁয়াজ চাষে আগ্রহ থাকবে না।
পিঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ও সোমবার নারুয়া বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। এ বাজারে প্রায় ১৫-২০ ট্রাক পিঁয়াজ প্রতিহাটে ক্রয়-বিক্রয় হয়। এখন ৭শত থেকে ৮শত টাকায় পিঁয়াজ ক্রয় করছি। ঢাকার বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে পিঁয়াজ ক্রয় করতে। আমাদের কোন সিন্ডিকেট নেই।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস,এম সহীদ নূর আকবর বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর ২ থেকে আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পিঁয়াজের চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ার কারণে জেলায় ৪ লাখ মেট্রিকটন পিঁয়াজ উৎপাদন হবে। তবে পিঁয়াজের দাম ১ হাজার থেকে ১২শত টাকার মধ্যে থাকলেও কৃষকরা লাভবান হতো।