রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের ঘোষনার ১ বছর পার হলেও এখনো স্থাপন করা হয়নি গোয়ালন্দে পদ্মানদী বেষ্ঠিত বিস্তৃর্ণ চরবাসীর নিরাপত্তায় অন্তর মোড় এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প। চরমপন্থীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি পুলিশ ক্যাম্পের দাবি জানিয়ে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারী) চরমপন্থীদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরাট অন্তার মোড় বাজারে প্রকাশ্য দিবালকে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করতে এসে ব্যর্থ হয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুই পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর অন্তর মোড় বাজারে পুলিশের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশে স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম ওই এলাকায় একটি পুুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর ১ বছরের বেশী সময় পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোন অগ্রগতি না দেখে হতাশ হয়ে পড়ছেন এলাকাবাসী। এ সময়ের মধ্যে এ এলাকায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেছে। চরমপন্থীদের হাতে বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ছাড়াও হামলা ও মারপিট করে একাধিক ব্যাক্তিকে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আলাপকালে স্থানীয় অনেকেই রাজবাড়ীবিডিকে জানান, দেবগ্রাম ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি দুর্গম চর ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় চরমপন্থীদের অবাধ বিচরণ। নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজী ও ডাকাতি, জলাশয় ও ভূমি দখল, স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, নারী ধর্ষন, অপহরণ, মারধর, হুমকিসহ বিভিন্ন অপকর্ম তারা করে আসছে। সীমান্তবর্তী পাবনা ও মানিকগঞ্জের চরমপন্থীদের সাথে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চরে প্রায়ই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এ সকল সন্ত্রাসীরা নদীর তীরবর্তী দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, ছোটভাকলা, পাঁচুরিয়া, বরাটসহ আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের উপদল তৈরী করে নেটওয়ার্ক বাড়ানোর কাজ করে চলেছে। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে হাজারো মানুষ।
গত ১৩ মে রাতে র্যাব-৮ ফরিদপুরের একটি দল দেবগ্রামের রাখালগাছির চরে চরমপন্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের প্রস্তুতির খবর পেয়ে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) রাজবাড়ী ও পাবনা অঞ্চলের শীর্ষ নেতা রাকিবুল হাসান বাপ্পি ও লালন মোল্লা নিহত হয়। কিন্তু এতেও চরমপন্থীরা দমে যায়নি। প্রায়ই তারা অস্ত্রের মহড়া ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি রাজবাড়ীবিডিকে জানান, চরমপন্থীদের কাছে চরের হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। মূখ খোলার কোন উপায় নেই। কেউ কোন কথা বললে মেরে ফেলা নয়তো তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প থাকলে তাদের আধিপত্য থাকতো না। এদিকে দুর্বৃত্তের গুলিতে দুইজন আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রাজবাড়ীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান। এসময় তিনি এলাকাবাসীকে আতঙ্কগ্রস্থ না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে চরমপন্থীদের আধিপত্য বিস্তার ও আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে এলাকাবাসী সাহসী পদক্ষেপে দূর্বৃত্তরা তাদের মিশন সফল করতে পারেনি।’ এ কারণে তিনি এলাকাবাসীদের ধন্যবাদ জানান। এ সময় এলাকাবাসী ফের এ এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্পের দাবি করলে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘অন্তার মোড় এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আশাকরি তা করা সম্ভব হবে।’
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মীর্জা একে আজাদ রাজবাড়ীবিডিকে বলেন, ওই এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের ব্যাপারে পুলিশ সুপার মহোদয় তিনিসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছেন। একটি ক্যাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে ফোর্স ও অস্ত্রের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত একটি জায়গার দরকার। সে সব চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে আপাতত ছোট ভাকলা ইউপি ভবন ব্যবহার করে ক্যাম্পের কাজ শুরু করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার সালমা বেগম রাজবাড়ীবিডিকে জানান, একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনে একাধিক মন্ত্রনালয়ের সম্পৃক্ততা থাকে। এর জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।