দক্ষিনাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌরুটে গত মাসের শুরুর দিকে টানা এক সপ্তাহ নাব্য সংকটের কারনে নৌযান চলাচল অচলাবস্থা হয়ে পরেছিলো। ফের নাব্য সংকটের কারনে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এই রুটে। এর উপর রয়েছে ফেরি সংকট। যে কারনে ঘাট এলাকায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার যানজট এখন নিত্য সঙ্গী।
বিআডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সুত্র জানায়, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটের জন্য ১৮ টি ফেরি থাকলেও বর্তমানে ৬ টি ফেরি বিকল হয়ে নারায়নগঞ্জের ডকইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে। এর মধ্যে রোরো ( বড় ) ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান পাচ মাস যাবৎ, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান দুই মাস যাবৎ, কেরামত আলী এক মাস যাবৎ, রুহুল আমীন ১০ দিন যাবৎ বিকল হয়ে মেরামতে আছে।
অপর দিকে বিআইডব্লিটিএ দৌলতদিয়া কার্যালয় সুত্র জানিয়েছে, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া অংশে থাকা ছয়টি ঘাটের মধ্যে পুরোপুরি চালু আছে তিনটি। ২ নম্বর ও ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় পানি কমে যাওয়ার কারনে ড্রেজিং করতে হচ্ছে আর ৫ নম্বর ঘাটের পল্টুন ফেটে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্ধ রেখে ঝালাই কাজ করা হচ্ছে। পুরোপুরি চালু রয়েছে ১, ৩ ও ৬ নম্বর ঘাট।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখাযায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা খুলনা মহা সড়কের পদ্মার মোড় পর্যন্ত সাড়ে পাচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এক সাড়ি যাত্রীবাহি বাস ও অন্য সারিতে কাচামাল ও ভারী মাল বহনকারী ট্রাক পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ সময় মেহেরপুর থেকে পাতা কফি নিয়ে ছেরে আসা ট্রাক চালক সবুজ মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার সময় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে আটকা পরেছি। বেলা তিনটা বাজে এখনও ঘাটের কাছাকাছি যেতে পারিনি, আজ পার হতে পারবো কিনা জানি না। এখানে ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা বসে থেকে প্রচন্ড কষ্ট করতে হচ্ছে। তাছারা পাতা কপিতে পানি দেওয়ার ফলে পচন ধরারও আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের অপর চালক লিটন সরদার বলেন, আমার গাড়িতে রয়েছে মিষ্টি কুমরা ও পেপে। পচন ধরবে বা নষ্ট হবে কিনা জানি না তবে মালিকের গালাগালি শুনতে হচ্ছে এক ঘন্টা পরপর। আমি যে কয় টাকা বেতন পাই তাতে আমার সংসার চালানোই কষ্ট ঘাটে বসে থেকে অনেক বেশি মুল্য দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।
যশোহর থেকে ছেরে আসা কে লাইন পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে বসে আছি ৯ ঘন্টা, কখন ফেরির নাগাল পাবো বলা মুশকিল। ঘাট এলাকায় বসে থেকে পরিবহনের মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাশাপাশি যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পরেছে।
বিআইডব্লিটিএ দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা ও যমুনার পানি কমে যাওয়ার কারনে প্রতি বছর এই সময়টায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এ বছর নাব্য সংকট বেশি। পদ্মার পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় বার বার ঘাটগুলোকে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে খনন কাজ অব্যহত রয়েছে বর্তমানে দৌলতদিয়ায় চারটি ড্রেজিং মেশিন দ্বারা খনন কাজ করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যাবস্থাপক বানিজ্য মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া পাটুরিয়ায় চলাচলকারী রোরো (বড়) ৮ টি ফেরির মধ্যে চারটিই বিকল যে কারনে ঘাট এলাকায় যানবাহনের সারি তৈরি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এক সপ্তাহের মধ্যে বিকল হওয়া ফেরিগুলো সচল হয়ে পারাপার শুরু হবে। তাছারা ঘাট এলাকায় ড্রেজিং চলায় চ্যানেল ঝুকিপূর্ন হয়ে পরেছে যে কারনে রাতের বেলায় ফেরিগুলো আস্তে আস্তে চালাতে হয়। যে কারনে পরদিন সকাল থেকে সারাদিন জানজট থেকেই যাচ্ছে।