সোহেল রানা ॥
উন্নত মানবিক সমাজ গড়তে এ দেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। মীর মোশাররফ হোসেন সেই মনের মানুষ হিসেবে তার লেখনীতে বিভিন্ন প্রবন্ধে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সেই উন্নত মানবিক সমাজকে ধ্বংস করতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একটি কুচক্রি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। রংপুরের পাগলাপীরে ফেইসবুকে স্টাট্যাস দেওয়া নিয়ে অন্য ধর্মের মানুষকে একটি মহল ঘর-বাড়ী জ্বালাও পোড়াও করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালিয়েছে। এই মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নিজেরা একবেলা না খেয়ে তাদের খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই মুহুর্তে মানবতা বিরোধী শক্তি ধর্মের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর রয়েছে। সরকার কঠোর হস্তে এদের দমন করবে। সেই সাথে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।
বুধবার সকালে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল,ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক, কালজ্বয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” রচয়িতা মীর মোশাররফ হোসেনের ১৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে বাংলা একাডেমী আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, এমপি এসব কথা বলেন।
সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ছোট বেলায় আমার দাদী বিষাদ সিন্ধু পড়িয়ে শোনাতেন। যখন আমি পড়া শিখলাম, তখন আমি চার দেয়ালে আটকে পড়লাম। আমার দাদী মনে করতো মীর মোশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধুই পবিত্র গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের পাশাপাশি সকলকে বিষাদ সিন্ধু পড়ার অনুরোধ জানাই। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রকে ঘিরে সকলের জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা করা হবে আগামী বছর থেকেই। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র হবে দেশের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞান চর্চার স্থান। সারা বছর চলবে বিভিন্ন আয়োজন।
তিনি প্রথমে হেলিকপ্টার যোগে বালিয়াকান্দি স্টেডিয়াম মাঠে অবতরণের পর সড়ক পথে মীরের সমাধীস্থলে যান। সেখানে তাকে রাজবাড়ী পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন পুলিশ সুপার সালমা বেগমের নেতৃত্বে। পরে অতিথিদের সাথে নিয়ে মীরের সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করাসহ মোনাজাত করেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন, রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ জিল্লুল হাকিম, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) ড. একেএম আজাদুর রহমান, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন, বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা, বালিয়াকান্দি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি বিনয় কুমার চক্রবর্তী, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফকীর আবদুর রশিদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, মীর মশাররফ হোসেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
এসময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সুধি সমাজ, কবি, শিল্পী, সাংবাদিক, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, মীর মশাররফ হোসেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। পরে মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।