আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। দিনটিতে এইডস নিয়ে সচেতন ধর্মী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত করা হলেও চরম ঝুঁকিতে থাকা দেশের বৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের নিয়ে নেই বিশেষ কোন কর্মসূচী। এইডস ঝুঁকিতে থাকা এ জনগোষ্ঠির এইডস নির্ণয়ে নেই নিয়মিত বিশেষ কোন কার্যক্রম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সর্র্ববৃহত দৌলতদিয়া যৌনপল্লী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলাতে অবস্থিত। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এইডস পরিস্থিতি অনেকটা ভাল থাকলেও যৌনপল্লী থাকার কারণে দেশের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো এইডস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রায় ৫হাজার বাসিন্দা সরাসরি চরম এইডস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে কারও শরীরে এই মরণ ব্যাধির ভাইরাস আছে কিনা তাও বোঝার উপায় নেই। কেন না এইডস নির্ণয়ের জন্য এখানে নিয়মিত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন কার্যক্রম নেই। তবে দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে সীমিত পরিসরে এইডস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয় দৌলতদিয়া ঘাট। সড়ক, রেল ও নৌপথে এখান দিয়ে যাতায়াতকারী বহু মানুষ এ পল্লীতে যাতায়াত করে। পাশাপাশি এইডস আক্রান্ত হওয়ার মতো সবগুলো ঝুঁকিই এখানে বিদ্যমান রয়েছে। অবাধ যৌনকর্ম, একই সুঁই ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে অনেকে নেশা গ্রহণ এখানে নিত্য-নৈমত্তিক বিষয়। এতে করে পল্লীর যৌনকর্মি, তাদের সন্তান, খরিদ্দার প্রত্যেকেই চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিপূর্বে এনজিও পিএসটিসি ও পায়াক্ট বাংলাদেশ নামের দুটি সংগঠন এ পল্লীতে দীর্ঘদিন এইডস নিয়ে কাজ করলেও অনেকদিন ধরে তা বন্ধ আছে। স্থানীয় হাসপাতালেও যেতে যৌনজীবিদের অনীহা রয়েছে। মারাত্মক যৌন রোগ বা সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় হাতুরে ডাক্তার ও ক্লিনিকে যায়। সেখানে তাদের থেকে গলাকাটা ফি আদায় করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল চিকিৎসায় অবস্থা আরো জটিল হয়।
সরেজমিন কয়েকজন যৌনজীবি ও অন্যান্যরা জানান, দৌলতদিয়ার এ যৌনপল্লীতে তালিকাভূক্ত যৌনকর্মির সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এর বাইরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী ও ছুকরির (বাড়ীওয়ালা-বাড়ীওয়ালীদের নিকট জিম্মি) সংখ্যা আরো অন্তত ৫ শতাধিক। অল্প বয়স্ক এ সকল যৌনকর্মিদের যৌনকর্মের ব্যাপারে কোন নিজস্ব স্বাধীনতা নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণকারীরা খদ্দেরদের কাছ থেকে বেশী টাকা নিয়ে এ সকল কিশোরীদের কনডম ছাড়া যৌনকাজ করতে বাধ্য করে। পাশাপাশি পল্লীর অনেক যৌনকর্মী সম্প্রতি বিভিন্ন ধরণের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। নেশার টাকা যোগাতে অনেকে বহু দায়-দেনা হয়েছে। এ অবস্থায় দেনা পরিশোধ ও নেশার টাকা যোগাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বেশি টাকার জন্য খদ্দেরদের সাথে অনিরাপদ যৌনকাজ করছে।
যৌনজীবিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দারা মারাত্মক এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। আগে আইসিডিআরবিসহ অন্যান্য সংগঠন এখানে এইডস নিয়ে কাজ করলেও এখন করে না। এ পল্লীতে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকলে পল্লীর বাসিন্দারা অপেক্ষাকৃত ভাল থাকতো।