রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস করার শর্তে দশম শ্রেণিতে ভর্তি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রতি ক্লাসে ভর্তির জন্য সেশন চার্জ অন্যান্য বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশী নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার ঐত্যিহ্যবাহি গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় ওই পদে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন কৃষি বিষয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিভাবক ও স্থানীয়দের রয়েছে নানা অভিযোগ। সম্প্রতি দশম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে তিনি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বাধ্যতামূলক কোচিং ক্লাস করতে হবে। এর জন্য প্রতিজন শিক্ষার্থীকে মাসে দিতে হবে ৬শ টাকা করে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে শিক্ষকরা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য কোচিং ক্লাসের ফাঁদ পেতেছেন। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকরা আন্তরিক হলে কোচিং ক্লাসের প্রয়োজন হওয়ার কথা না। যে শিক্ষকরা কোচিং করাবে তারাইতো ক্লাস নেবে। কোচিংয়ে ভালো পড়াবে আর ক্লাসে দায়সারা পাঠদান করবে এটা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য না। বর্তমান সরকার যেখানে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে খোদ সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো রেজাল্ট করে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে উঠেছে। অথচ কোচিংয়ে আমি রাজি না হওয়ায় আমার ছেলেকে দশম শ্রেণিতে ভর্তিতে আপত্তি করেন প্রধান শিক্ষক। কি আর করব, পরে কোচিংয়ের শর্তে রাজি হয়ে দশম শ্রেণিতে ভর্তি করেছি।
গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জহুরুল ইসলাম জানান, কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ অভিযোগ সঠিক নয়। নবম শ্রেণির ১১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সকল বিষয়ে কৃতকার্য হয়ে দশম শ্রেণিতে উঠেছে ৫৬জন। ১/২ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ৫২জন। ওই ৫২ জনের ভর্তির ক্ষেতে কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের নির্দেশনাও আছে। এক্ষেত্রে ওই সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবক যদি লিখিত দেয় নির্বাচনী পরীক্ষায় কোন বিষয়ে অকৃতকার্যকৃত হলে চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনুরোধ করবেন না, তবে তাদেরকে ভর্তি করা হবে। অতিরিক্ত সেশন চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্দেশিত সেশন চার্জের চেয়ে এখানে কম নেয়া হচ্ছে। অন্য স্কুল কত নিল সেটা দেখার বিষয় না। এখানে অন্য স্কুলের চেয়ে কিছু টাকা বেশী নেয়া হলেও ওই সকল স্কুলের চেয়ে তাদের ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো বলে তিনি দবি করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবককে চাপ দিয়ে কোচিং ক্লাস নেয়া যাবে না। কোন দুর্বল শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সদিচ্ছা থাকলে একটি বিষয়ে অনধিক ১৫০ টাকা নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে কোন অভিভাবকের আপত্তি থাকলে সেটা করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।