মো. মকবুল খান
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০ টায় রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হতে ভারতের মেদিনীপুরগামী স্পেশাল ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে।
ট্রেনটির যাত্রাশুরুকালে রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি (পিপিএম/বিপিএম) আঞ্জুমান-ই-কাদরীয়া তরিকার সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ইরাদত হোসেন ওরশ যাত্রীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ।ভারতের মেদিনীপুর শহরের মির্জা মহল্লা জোড়া মসজিদ দায়রা পাকে সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মুরশেদ আলী আল কাদরী (মওলা পাক) এর ১১৮ তম বার্ষিক ওরশ মোবারকে যোগ দিতে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হতে ২৪ বগিতে মোট ২২৬০ জন ওরশ যাত্রী নিয়ে স্পেশাল ট্রেনটি ভারতের মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ট্রেনটি ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে মেদিনীপুর জেলার রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে। মওলা পাকের পবিত্র ওরশ শরীফ আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি, মোতাবেক বাংলা ৪ ফাল্গুন দিবাগত রাতে জোড়া মসজিদ মহল্লা মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সাজ্জাদানশীল বড় হুজুর পাক নামে খ্যাত হযরত সৈয়দ শাহ রশিদ আলী আল কাদেরী আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরীর উপস্থিতিতে ও পরিচালনায় পবিত্র ওরশ পাক পরিচালিত হবে। সারা রাত ওরস শরিফ উদযাপন শেষে পরের দিন তথা ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে ট্রেনটি পূনরায় বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওয়ানা হবে।
স্পেশাল ট্রেন ছাড়াও বাই রোডে,বাই রেলে, প্লেনে বিভিন্নভাবে মুরিদানরা মেদিনীপুরে গিয়ে থাকেন। পবিত্র ওরশ উপলক্ষে মওলা পাকের দরবার প্রাঙ্গণ জুড়ে বিশাল মেলা বসে।
স্পেশাল ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হতে ছেড়ে যাবার পূর্বে বিকেল থেকেই হাজার হাজার মানুষ ভক্তি ভরে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে এ স্পেশাল ট্রেনটি দেখতে ছুটে আসে। বিকাল হতে রাত্র ১০ টা পর্যন্ত রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের সমস্ত জায়গা ও দোকানপাট, বাজবাড়ী বাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। অনেক মা-বোন-ভাই ওরস শরীফে না যাওয়ার বেদনায় ক্রন্দনরত, অনেকে দোয়া খায়ের নিতে ব্যস্ত, অনেকে ওরসে যাওয়ার খুশিতে আত্মহারা, অনেককে আবার ওরস তীর্থ যাত্রীদের কাছে নিজের সালাম-কালাম-নজর-নেয়াজ পাঠাতে ব্যস্ত দেখা গেছে।
ট্রেনটি ছাড়ার পূর্ব মুহুর্তে আঞ্জুমানে-ই কাদেরীয়া পরিচালনা কমিটি হতে কিছু বয়ান ও মোনাজাত করা হয়। পরে ইমানী জজবায় নিম্নবর্ণিত শ্লোগান দেয়া হয় তারপরে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
নারায়ে তাকবীর – আল্লাহু আকবার
নারায়ে রিসালাত – ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)
নারায়ে হায়দারী- ইয়া আলী (আঃ)
নারায়ে হাসান- ইয়া হাসান (আঃ)
নারায়ে হুসাইন- ইয়া হুসাইন (আঃ)
নারায়ে গাউস-ইয়া গাউসুল আযম দাস্তগীর
বড় হুজুর পাক কেবলা- জিন্দাবাদ
ছোট হুজুর পাক কেবলা-জিন্দাবাদ
শাহজাদা হুজুর পাক কেবলা-জিন্দাবাদ।
আঞ্জুমান-ই-ক্বাদেরীয়া- জিন্দাবাদ।
হাজার হাজার মানুষ এই শ্লোগান বলতে বলতে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এই ট্রেনটি ”স্পেশাল ট্রেন” নামেই পরিচিত। এটিই একমাত্র ট্রেন যা বাংলাদেশ হতে সরাসরি ইন্ডিয়াতে সর্বপ্রথম যাওয়া শুরু করে। এটিই একমাত্র ট্রেন যা ১০০ বছরের অধিক,সময় ধরে ওরস যাত্রী নিয়ে প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গের মেদেনীপুরে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই ট্রেনটি যখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে মেদিনীপুর জেলায় যায়,তখন অনেক ভারতীয় মুসলিম, হিন্দু ভাই-মা-বোনেরা সারিবদ্ধ হয়ে দেখতে থাকে এবং অনেকের দেখা যায় ভক্তি ভরে প্রনাম করতে।
স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৯০২ সাল থেকে স্পেশাল ট্রেন রাজবাড়ী জেলা হতে প্রতি বছর ভারতে যাচ্ছে। আঞ্জুমান-ই-কাদেরিয়া, রাজবাড়ীর এর তথ্যমতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর ৩৩ তম এবং বড় পীর হযরত আঃ কাদের জ্বিলানী (আঃ) এর ২৩ তম অধঃস্তন পবিত্র বংশধর সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মুরশেদ আলী আল কাদরী (মওলা পাক) এর পূর্ব পুরুষগণ প্রায় ২৫০ বছর আগে ইরাকের বাগদাদ থেকে ভারতবর্ষে আগমন করেন। পরবর্তীতে বিহারের পুর্নিয়া এবং বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট মেদিনীপুরে অবস্থান করেন। সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মুরশেদ আলী আল কাদরী (মওলা পাক) ১৮৫২ সালে ১৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তার অসাধারণ মোজেজার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি মেদিনীপুৌরে ইস্ত্রিগঞ্জ ও গোপ পাহাড়ে কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনা করতেন। তিনি উপমহাদেশ এর বহু স্থান ভ্রমণ করেছেন। তাঁর ওরশ পাকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ছাড়াও বাংলাদেশ, বার্মাসহ সারা বিশ্ব হতে প্রচুর লোক সমাগম হয়। মেদিনীপুরের ২২ নং খানকা শরীফে তাঁর বিশাল কুতুব খানা রয়েছে। সে যুগের অন্যতম কবি হিসেবেও তাঁর প্রসিদ্ধি রয়েছে। উর্দু ভাষায় লেখা কাব্যগ্রন্থ দেওয়ান পাক এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে ভক্তদের মাঝে পরিগণিত হয়ে আসছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, জনাব কাজী হেদায়েত আলী তার জীবন্দশায় রাজবাড়ী জেলা হতে মেদিনীপুরে ওরশে যাবার প্রাক্কালে রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা এবং রাজবাড়ীর নামকরা ঘড়ি মেকার মৌলভী মোঃ ইউসুফ খান এর স্ত্রী বিশিষ্ট আলেম সৈয়দা হামিদা বানুর (যিনি মহকুমা আমলে গোয়ালন্দ মহকুমা লেডিস ক্লাবে নিয়মিত মিলাদ পড়াতেন) নিকট হতে উর্দুতে রাজবাড়ীর বিভিন্ন বিবরণ সম্বলিত চিঠি লিখিয়ে মওলা পাকের নিকট দিলে মওলা পাক চিঠি পড়ে ভুয়সী প্রশংসা করতেন।