শামীম শেখ ॥
“সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন ভাষা শহীদ রফিক। রফিকের কপালে গুলি লেগে, মাথার খুলি উড়ল। তারই রক্তের স্রােতের ধারায় বাংলা স্বাধীন হলো”। ছন্দের তালে তালে ভাষা শহীদ রফিকের উপর এভাবে দীর্ঘ ১২ পৃষ্ঠার অনুসন্ধানীমূলক আত্মজীবনী লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান মিঞা।
২০০০ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর শিক্ষকতা পেশায় আসেন আনিছুর রহমান মিঞা। সর্বশেষ ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত হলিক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে দীর্ঘ ৮ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর গত বছর অবসর নিয়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের মধ্য দিয়েও তিনি লেখা-লেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। অসংখ্য গান, কবিতা ও বেশ কয়েকটি বই তিনি রচনা করেছেন। তার অন্যতম দক্ষতা হলো অনর্গল ছন্দের তালে তালে কথা বলা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গোয়ালন্দে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, পেশাগত জীবনে তার অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু ছন্দের তালে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিনের আত্মজীবনী রচনা ও তাঁর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সংবর্ধনা পাওয়া অন্যতম। তিনি বলেন, রফিকের গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার পারিল গ্রামের বাসিন্দা কর্ণেল মুজিবুল ইসলাম সিগন্যালস এর অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় তিনি রফিক উদ্দিনের উপর দীর্ঘ অনুসন্ধান ও পরবর্তীতে কবিতার ছন্দে ১২ পৃষ্ঠার আত্মজীবনী রচনা করতে সমর্থ্য হন।
অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান মিঞার জন্ম পাবনার সাথিয়া উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মওলানা মো. ইসমাইল হোসেন মিঞা। তিনি বর্তমানে ঢাকার সাভারের কুটুরিয়া এলাকায় নিজ বাড়ীতে বসবাস করেন। গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের প্রয়াত হাচেন বেপারী তার শ্বশুর। সেই সুবাদে বহু আগে থেকে গোয়ালন্দে তার আসা-যাওয়া। গোয়ালন্দের গৌরব উজ্জল ইতিহাস নিয়ে তিনি একটি সুন্দর গানও রচনা করেছেন। তার লেখা বেশ কয়েকটি বই ইতিপূর্বে ঢাকা বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনা তিনি লিখেছেন।
৬৯’র গণ আন্দোলনে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন তুখোর মেধাবী। এসএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পরবর্তীতে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে রয়েছে সুখকর স্মৃতি। তাঁকে নিয়েও রচনা করেছেন সুন্দর গান। রফিকের জীবনী নিয়ে অনুসন্ধানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা রফিকসহ অন্যান্য ভাষা শহীদদের আত্মদানকে বৃথা যেতে দিয়ো না। দেশকে ভালবেসো। দেশের জন্য কাজ করো।