সোহেল রানা ॥
রিতা বেগম (৩৮)। পারিবারিক অসচ্ছলতা, তখন নবম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। বিয়ে কি তা জানা নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়, স্বামী ও তার সংসারের লোকজনের মনযুগিয়ে চলতে হয় শুধু তাই জানা। ৩ বোন, এক ভাই ভাইয়ের সংসারে রিতা বেগম সবার ছোট। ১৬ বছর বয়সে সাংসারিক নানা অসুবিধার মধ্যেই তার বিয়ে হয় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গাবাড়ীয়া গ্রামের রঞ্জু মন্ডলের সাথে। বিয়ের পর স্বামী ও তার পরিবারের ভালমন্দ দেখতে দেখতে সময় যায়। নিজের শরীরের খেয়াল নেই। বিয়ের এক বছর পরই মারা যান তার বাবা। এরই মাঝে তার গর্ভে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানটি এখন নবম শ্রেণীতে পড়ে। স্বামী-সন্তানের আদর যত্ন নিতে গিয়ে হিমসীম খায়। এরই মাঝে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। স্বামীর ভিটেতেই বসবাস করতে থাকে। তার মায়েরও ব্রেস্ট টিউমার ছিল। যখন রিতার বয়স ২৪ বয়স তার ব্রেস্টে টিউমার দেখতে পান। লোকজনের সাথে পরামর্শ করে হোমিও চিকিৎসায় ভালো হয় একথায় বিশ্বাস করে হোমিও চিকিৎসা গ্রহন করে। দীর্ঘদিন হোমিও চিকিৎসায় টিউমারটি বড় হতে থাকে। আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাইয়ের সহযোগিতায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিউমারটির অপারেশন করা হয়। কিন্তু টিউমারটি অপারেশন করা হলেও বায়োপাছি করার জন্য রেখে দেওয়া হয় জীবানু। ডাক্তাররা টিউমারটির জীবানু হারিয়ে ফেলে। কিছুদিন না যেতেই ব্রেস্টে পুনরায় টিউমারটি দেখা যায়। দ্বিতীয় দফা টিউমারটি অপারেশন করা হয়। টিউমারটি বায়োপাছি করার পর ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানে বেস্টটি অপসারন করা হয়। তাকে ২১টির মতো রেডিও থেরাপী প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে থেরাপী ও মুখের ঔষধ শেষ হয়। ভাইয়ের অর্থে ছেলের লেখাপড়া ও তার সংসার চলে। অর্থের অভাবে যখন চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় বাড়ীতেই বিনা চিকিৎসায় দিন পার করছিল। এমন সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য বালিয়াকান্দি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হয় এ খবর দেয়। তার খবর পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে আসেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অজয় কুমার হালদারের আন্তরিকতায় ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী ক্যান্সার আক্রান্ত রিতা বেগমের হাতে চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকার চেক তুলেদেন। এ ভাবেই রিতা বেগমের বিপর্যস্ত জীবন কাহিনী সমাজসেবা কর্মকর্তা অজয় কুমার হালদারের নিকট তুলে ধরেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা অজয় কুমার হালদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রিতা বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্যর সহযোগিতায় তার কার্যালয়ে আসেন। তার জীবন কাহিনী শুনে তিনি দ্রুত যাতে সরকারী সহযোগিতা পান তার ব্যবস্থা করেন।