দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের চলন্ত ফেরিতে জুয়াড়ি চক্রের দৌরাত্ম কমছে না। চলাচলকারি ফেরিতে পুলিশি প্রহরার কোন ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে জুয়াড়িরা দিন দিন বেপড়োয়া হয়ে উঠছে।
সোমবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে জুয়াড়ি চক্রের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে পাটুরিয়াঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি রোরো ফেরিরে যাত্রীরা। জুয়াড়ি চক্র প্রথমে জুয়ার ফাঁদ পাতলেও এক পর্যায়ে তারা ছিনতাই শুরু করে। এসময় তারা যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে ফেরি ঘাটে পৌঁছানের আগ মুহুর্তে ট্রলারে করে পালিয়ে যায়।
এই চক্রের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত একে ট্রাভেলস্ পরিবহনের সুপার ভাইজার আবু হুমাইয়া জানান, তাদের নৈশ কোচটি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসে রাত ২টার দিকে নদী পাড়ের জন্য পাটুরিয়া ঘাট থেকে একটি রোরো (বড়) ফেরিতে ওঠে। ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসার কিছুক্ষন পর ট্রলার যোগে জুয়াড়ি চক্রের ৮/১০ জন সদস্য তাদের ফেরিতে ওঠে। প্রথমে তারা ফেরির ডেকের উপরে জুয়ার আসর বসায়। শুরুতে তারা নিজেরই বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীদের জুয়ায় অংশ নিতে প্রলুব্ধ করে। ফেরিটি ঘাটে পৌঁছানোর আগমুহুর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে লুটপাট শুরু করে তারা। তিনি আরো জানান, ওই সময় তিনি তার বাসের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই চক্রের সদস্যরা মারমুখী হয়ে অন্যান্য যাত্রীদের মত তার কছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, এই জুয়াড়ি চক্রের সাথে ফেরি সংশ্লিষ্টদের যোগসাজস রয়েছে। তা না হলে এত বড় একটি চলন্ত ফেরির সাথে ছিনতাইকারীদের ট্রলার সংযুক্ত হয় কিভাবে। আবার কিভাবেই বা তারা নির্বিঘেœ ট্রলার নিয়ে পালিয়ে যায়। একজন সুপারভাইজার এক মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতনও পায় না। আর তার যদি ৩০ হাজার টাকা খোয়া যায় তবে এই লোকটির কি অবস্থা হয় চিন্তা করতে পারেন। এ ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও তা বন্ধের ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পরে না। বরং আগে শুধু রাতে এসব ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে অনেক সময় দিনের আলোতেও চক্রটি সক্রিয় থাকে। তারা এসময় চলন্ত ফেরিতে পুলিশ নিরাপত্তার দাবি করেন।
বিআইডব্লিউটিসি’র ব্যাবস্থাপক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের চলন্ত ফেরিতে জুয়াড়ি দলের দৌরাত্ম বন্ধের জন্য ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সকল পর্যায়ে মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। কিছুদিন এ চক্রের তৎপরতা না থাকলেও আবারো শুরু হয়েছে।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. লাবু মিয়া জানান, ফোর্স সংকটের কারণে ভিআইপি ছাড়া কোন ফেরিতে পুলিশী নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না। তারপর বর্তমানে অনেক পুলিশ সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন। ফোর্স সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি এখানে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য থাকলে সকল ফেরিতে পুলিশী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।