সোহেল রানা ॥
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালো রাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের চারপাশ ঘিরে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে মিলিটারিদের সাঁজোয়া যান। তান্ডব চলে হলের কক্ষগুলোতে। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীসহ গণহত্যার শিকার হন ৬৬ জন। তাদেরই একজন শিবু কুমার দাস। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের পাটুরিয়া গ্রামে তার বাড়ী। শিবুর সাথে একই রাতে শহীদ হন শিবুর বাল্যবন্ধু নিরোদ।
প্রকৌশলী শিমুল দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন শিবু। কয়েকদিন আগেই বাড়ি এসেছিলেন, ক্যাম্পাসে ফেরার সময় হয়ে এসেছিল প্রায়। এরই মধ্যে নিরোদ খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, শিবুর সাথে ঢাকা যাবেন। যেকোন উপায়েই একটা চাকরী যোগাড় করতে হবে। ২৫ শে মার্চ সকাল বেলা আড়কান্দি রেল স্টেশনে গিয়েও ট্রেন ধরতে পারলেন না। কিন্তু নিরোদের যে আর দেরী সইছিল না। ঢাকা তাকে যেতেই হবে, যত দ্রুত সম্ভব। অগত্যা দুই বন্ধু হেঁটে রওনা হলেন রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে এবং সন্ধ্যায় ঢাকা পৌঁছালেন। মাঝরাতেই সমগ্র ঢাকায় অপারেশন চালায় বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। শহীদ হলেন নিরোদ আর শিবু।
একমাত্র সন্তানের মৃত্যু শোক সইতে পারলেন না শিবু’র বাবা। স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে রেখে পুত্র শোকে পাগল হয়ে পরলোক গমন করলেন শিবুর পিতা গনেশ চন্দ্র দাস। মা বেঁচে ছিলেন অনেক বছর। কিন্তু কেউই খবর রাখেনি এ শহীদ জননীর। শিবু-নিরোদ এর স্মৃতিকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেনি কোনো সরকারী কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর আগে পাটুরিয়া যুব মিলন সংঘের উদ্যোগে আড়কান্দি বাজার থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত সড়কটিকে শহীদ শিবুর নামে নামকরণ করে এবং পাটুরিয়া স্কুল থেকে বারুগ্রাম পর্যন্ত সড়কটিকে শহীদ নিরোদ এর নামে নামকরণ করে দুটি ফলক স্থাপন করা হয়। কিন্তু সে ফলক দুটিও অযতেœ অবহেলায় পরে আছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে এলাকার তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করিয়ে দিতে এ দুই শহীদের স্মৃতিকে রক্ষা করতে সরকারী উদ্যোগ এখন সময়ের দাবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধু’র ক্যান্টিনের সামনের সাইনবোর্ডে এবং ডাকসু ভবনে খোদাই করা আছে শহীদ শিবু কুমার দাস এর নাম। অথচ এলাকাতে এ শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণে নেই কোনো সরকারী উদ্যোগ। আজও জানেনা এলাকার মানুষ এ দু,টি শহীদ সন্তানের ইতিহাস। কালের আবর্তে মুছে যাচ্ছে এ পরিবারটির নাম। তরুন প্রজন্মকে এ ইতিহাসটি জানাতে সরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
শিবুর বেচে থাকা একমাত্র বোন উত্তরা দাস, ফরিদপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত। তিনি মৃত্যুর আগে শহীদ ভাইয়ের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, ২৫ শে মার্চ কালো রাতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। যেখানে শহীদদের উদ্দেশ্যে উপজেলা প্রশাসন দিনব্যাপী কর্মসুচি গ্রহন করেছে সেখানে দু,জন শহীদ সন্তান রয়েছে। তা এইমাত্র শুনতে পেলাম। আমরা অবশ্যই সেই শহীদ পরিবারের খোজ নেব এমনকি তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্মৃতি স্তম্ব নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।