রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে রোববারের হঠাৎ ঝড়ে আড়াইশ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত ও অন্তত ৩শ হেক্টর জমির ফসল নষ্টসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় নারী-শিশু নিহতসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে রোববার পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জীবন ও বাবলু নামের দুই সহোদর নিখোঁজ রয়েছে। তারা গোয়ালন্দ উপজেলা দেবগ্রাম ইউনিয়নের হাতেম আলীর ছেলে।
ঝড়ের কবলে পড়ে আহতরা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট কাচরন্দ গ্রামের রোজিনা (৭০), গাজীপুর সদর উপজেলার হরিনাল গ্রামের সজীব (১৯), রংপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ নিচপাড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন (৩০), গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সামছু মাষ্টারের পাড়া গ্রামের মামুন (২৮), সানাউল্লাহ ফকির পাড়ার ঝর্ণা (১১), অমর আলী মোল্লার পাড়ার হেলাল মন্ডল (১৮), ছোটভাকলা ইউনিয়নের ভাগুলপুর গ্রামের সুমাইয়া (১২) সহ আরো অন্তত ২০ জন। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ২জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, রোববার বিকেলে হঠাৎ করেই গোয়ালন্দ উপজেলার ওপর দিয়ে তীব্র গতিতে ঝড়োবাসত বয়ে যায়। প্রায় ১ ঘন্টার ঝড়ে ওই এলাকার অনেক বাড়ি-ঘর দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে থাকা বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের তৎপরতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়া ও তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুত বিহীন রয়েছে।
সোমবার সরেজমিন দেবগ্রাম আশ্রয় প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি ঘরের চাল ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এসময় কথা হয় প্রকল্পের বাসিন্দা আয়নাল শেখ, সোহাগ শেখ, জহির মোল্লা, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, তাদের অনেকেরই বসত ঘরের চাল গত রোববার বিকেলের ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এরপর মেঘ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারা রাত নারী-শিশুসহ পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই ছিলাম। যাদের আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার মত ব্যবস্থা আছে তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে, আর যাদের নেই তারা এভাবেই আছে। তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় চেয়াম্যান তাদের দেখে গিয়ে সাহয্য সহায়াতার আশ^াস দিয়েছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু সাইদ মন্ডল মাছ ধরতে গিয়ে দুই সহোদর সোমবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দেবগ্রাম ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পের ২৭টি বসত ঘরসহ মোট ১১৭টি ঘর ঝড়ের কবলে পড়ে ভেঙে গেছে। এছাড়া ছোটভাকলা, দৌলতদিয়া, উজানচর ইউনিয়নের মোট ১৬৫টি ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সরকারী সহায়তার পক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, রোববারের ঝড়ে উপজেলার ১শ হেক্টর জমির ভূট্টা ও ২৫ হেক্টর জমির পিয়াজের দানা (কলি) নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া অন্তত পৌনে ২শ হেক্টর জমির কলার বাগান নষ্ট হয়ে গেছে।
ছোটভাকলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, সরকারী ভাবে যদিও তার ইউনিয়নের মাত্র ৫৫টি বসত ঘর ঝড়ে ভেঙে যাওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে ভেঙেছে এরচেয়ে অনেক বেশী। এসময় তিনি তার ইউনিয়নেই শুধু আড়াইশর বেশী কাঁচা ঘর ভেঙে যাওয়ার দাবি করেন।