রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নগরবাসী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এসব অনিয়ম অবগত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিভাবকদের গণ স্বাক্ষর ও কর্যকরী কমিটির রেজুলেশনসহ লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, শিশুদের শারীকিক ভাবে নির্যাতন ও কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত, অভিভাবকদের পেশা নিয়ে তাচ্ছিল্য, বিদ্যালয়ে টিউশনি করায় যথা সময়ে ক্লাবে না যাওয়া, পরীক্ষার খাতা না দেখে মুখ চিনে নম্বর দেয়া, সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ভাবে খরচ না করা, সহকর্মী ও অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত বিদ্যালয়ে না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। এতেকরে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংখ্যা একদিকে যেমন আশঙ্কাজন হারে কমছে অপরদিকে ঝরে পড়ার সংখ্যাও বাড়ছে। প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সকারের এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ড ও স্বেচ্ছাচারিতা বিষয় উল্লেখ করে অভিভাকদের গণস্বাক্ষরসহ তাকে অপসারণের দাবিতে গত ১৪ নভেম্বর অভিযোগ পত্র দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়া রাণী বিশ^াসের মা মালতি বিশ^াস রাজবাড়ীবিডিকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রধান শিক্ষক আমার মেয়েকে তার ব্যবহৃত ছাতা দিয়ে বেধরক পিটিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে সে জ¦রে ভুগছে। ৫ম শ্রেণির অপর ছাত্র আসিফ মন্ডলের মা আসমা বেগম রাজবাড়ীবিডিকে জানান, দেবেশ স্যার তার ছেলেকে লেখা-পড়া বন্ধ করে বাসের হেলপারি করার পরামর্শ দিয়েছেন, এতে সে পড়াশুনার প্রতি আরো অমনোযোগী হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ রাজবাড়ীবিডিকে জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অভিযোগের কোন শেষ নেই। অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। এ সব বিষয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে অবহিত করাও হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে চাচ্ছেন। আমি সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অভিভাবকদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিভৃত করেছি। কিন্তু ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তিনি আরো বলেন প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না, পাঠদান করান না, ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ কারণে অনেক অভিভাবকরা সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দেবেশ চন্দ্র সরকারের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে লিখে আমাকে যা পারেন করেন। আমি তার পরোয়া করি না।’ এ বলে ফোন কেটে দেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মালেক রাজবাড়ীবিডিকে জানান, অনেকদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে অভিভাবকরা বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছেন। সম্প্রতি আমি বিদ্যলয়টি পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানের নোটিশও প্রদান করা হয়েছে। তিনি নোটিশের সন্তোসজনক কোন উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া জেলা শিক্ষা অফিসারও তাকে একই বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন।